Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মুক্তিযুদ্ধ ও গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ

          বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসের এক অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত। বিশ্বের অনেক দেশ বিভিন্ন  চুক্তি, আপস প্রভৃতির মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে তারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু করে অতি অল্প সময়ে বিরোধীদের বাধ্য করেছে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র সমর্পণের । তিরানব্বই হাজার সৈন্য বাঙালির পায়ের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করার এ উদাহরণ বিরল । গোপালগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস । এখানে ঘুমিয়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান । শহিদ অধ্যাপক সন্তোষ দাস, শহিদ আব্দুল লতিফ,শহিদ গোলজার হোসেন চৌধুরী, শহিদ মাহবুবুর রহমানসহ হাজার শহিদের আত্মত্যাগে রক্তস্নাত হয়ে গোপালগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হয়ে আছে চিরঞ্জীব।

মুক্তিযুদ্ধের আগের ইতিহাসঃ-

          মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের শোষণের প্রতিবাদ জানায় এ জনপদের জনগণ। তারা সব সময় ছিল মুক্তি প্রিয় এবং বাঙালি হিসাবে নিজেদের স্বাধীন হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নে বিভোর । এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোয় এ জনপদের জনগনের অবদান ছিল অনন্য। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে এ জেলার প্রতিটি গ্রামে চলে চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি । এর মধ্যে সরকারি বঙ্গবন্ধু স্কুল মাঠ, হিজলাবাড়ী স্কুল মাঠসহ বহু স্থানে চলে গেরিলা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা ২৬শে মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে । ২৫ শে মার্চ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত এ জনপদ ছিল শত্রুমুক্ত । ৩০ এপ্রিল এ জেলায় মেজর ঘোরী স্টিমার যোগে খুলনা হতে গোপালগঞ্জ এর সাথে শুরু হয়ে যায় গেরিলা প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত জনযুদ্ধ।


বিশেষ বাহিনীঃ-

        মুক্তিযুদ্ধে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ছিল নিয়মিত সেক্টরে কার্যক্রম । এ এলাকাটি সীমান্ত এলাকা হতে দুর হওয়ায় সেক্টর কমান্ড ছাড়া এখানে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট নিজস্ব বাহিনী । গ্রামে গ্রামে সযত্নে প্রতিরোধ । এরূপ তিনটি বিশেষ বাহিনী ছিল ১। হেমায়েত বাহিনী ২। মুজিববাহিনী ৩। মুক্তিবাহিনী

নিয়মিত বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল বর্তমান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান জনাব লুৎফর রহমান, মুজিব বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ইসমত কাদির , হেমায়েত বাহিনীর নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন হেমায়েত উদ্দিন বীর বীক্রম । এছাড়া সেনাবাহিনী, ইপিআর ও অন্যান্য বাহিনী হতে পালিয়ে আসা সদস্যগণ তাদের গ্রামে  বিভিন্ন বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন । এদের মধ্যে ক্যাপ্টেন হালিম, ক্যাপ্টেন মিলু, ক্যাপ্টেন সিহাবউদ্দিন, ক্যাপ্টেন জামাল,আবদুর রহমান প্রমুখ।


জেলার গুরুত্বপূর্ণ সম্মুখযুদ্ধঃ-

১। ভাটিয়াপাড়ার যুদ্ধঃ  মধ্য আগস্ট মাসে কমান্ডার ইসমত কাদির ও ক্যাপ্টেন হেমায়েতের যৌথ নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস স্টেশনে অবস্থিত  পাক-বাহিনীর ক্যাম্পে হামলা চালায় । ঐ যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেছিল। ঐ যুদ্ধে ১৯ জন পাক সেনা ও ৫জন রাজাকার নিহত হয়।

২। ফুকরা যুদ্ধঃ  মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে অক্টোবরের শেষে সদর উপজেলার ফুকরা নামক স্থানে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয় । মুক্তিযোদ্ধারা এমবুশ করে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর । এতে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় ৪০ জন গ্রামবাসী শহিদ হয়।

৩। কোটালীপাড়ায় রাজাপুরের যুদ্ধঃ  হেমায়েত বাহিনীর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেমায়েতউদ্দিন বীর বিক্রম এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ১৪ অক্টোবর ১৯৭১ সালে কোটালীপাড়ার রাজাপুর গ্রামে এক প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ২ জন পাক-হানাদার নিহত হয় এবং ইব্রাহিম নামক একজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয় । এ যুদ্ধে হেমায়েত বাহিনীর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম আহত হন।

৪। ভাটিয়াপাড়ায় আত্মসমর্পণ:   ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাক-হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে ও ভাটিয়াপাড়ার ওয়ালেস স্টেশনস্থ পাক সেনাদের ক্যাম্পটি দখল নিয়ে পাক-সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয় । ১৬ ই ডিসেম্বর  ঐ দিন মিত্র বাহিনীর মেঃ কর্নেল জোয়ান ও ৮নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুর প্রমুখ এর নেতৃত্বে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয় । অবশেষে ১৯ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডারের কাছে ৪৯ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে।

৫। অন্যান্য যুদ্ধঃ এ জেলায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গেরিলা বাহিনী দ্বারা পাক-বাহিনী আক্রান্ত হয় । এ সব যুদ্ধের মধ্যে কোটালীপাড়ার সিকির বাক্তারের যুদ্ধ অন্যতম । এছাড়া কেকানিয়া, পাইককান্দি, ঘোড়াদাই ও যুদ্ধ অন্যতম । এ সব প্রতিরোধযুক্ত অনেকে হতাহত হন। অক্টোবরের মধ্যভাগে হেমায়েত বাহিনী কর্তৃক লুটকৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে পাক বাহিনী কলাবাড়ি গ্রামে প্রচুর হত্যা ও ধ্বংস চালায়।


 বধ্যভূমি :-

ইতিহাসের নির্মম ৭১ এর বধ্যভূমি, জয়বাংলা পুকুর। বাস্তবিকপক্ষে এটি ছিল এসডিও অফিস সংলগ্ন পুকুর । এই এসডিও অফিসে পাক-হানাদার বাহিনী ঘাটি গাড়ে । এ স্থানে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান হতে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এসে নির্যাতন করে মেরে এই পুকুরে ফেলে দেয়া হত । এ ঘাটিতে অসংখ্য নারীকে ধরে নিয়ে এসে নির্যাতন করা হয়েছে । এই পুকুরে শহিদ হয়েছে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা । শহিদ হয়েছেন গুলজার হোসেন চৌধুরী, শহিদ মাহবুবুর রহমান, আসাদ শেখ, কুটি মিয়া, শওকত আলী,আব্দুল মান্নান খালাসী, সিহাবদ্দিন মোল্লাসহ অগণিত শহিদ মুক্তিযোদ্ধা এখানে প্রাণ হারান।    

 

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা(সংযুক্ত)